একটা সকাল
===============
সকালে ওঠেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।বাথরুমে জল নেই। তাই নিয়ে চিল্লাচিল্লি। জল তোলার মেশিন নষ্ট। সকাল বেলায়। অথচ রাত দশটায় জল তোলা হয়েছে। তিন ফ্ল্যাটে গড়ে চারজন করে বারোজন মানুষের পাঁচ হাজার লিটারের দুই ট্যাংক জল কি করে শেষ হয় রাতের মধ্যেই ? সকালবেলা হাগু করা পাছা ধুয়ার জলটুকুও থাকবে না?আশ্চর্য।!প্রচন্ড রাগ হলো বাড়িওয়ালা অজয়ের। শুক্রবার। সব দোকানপাট বন্ধ। মিস্ত্রী পাওয়া দুস্কর। সেই ভালো। জলের কষ্ট কি? সবাই একটু বুঝুক। জলিল ওস্তাগার।সেদিনের সামান্য হেলপার। অজয়ের হাত ধরে এখন হাইরাজ বিল্ডিংয়ের বাঁধা ওস্তাগার। এক সাথে কয়েকটা কাজ রাখে। ছোট খাট কাজের জন্য তাকে তো নয়ই তার হেলপারকে ও পাওয়া মুস্কিল। অগত্যা নাওয়া খাওয়া করতে হলে বেরুতেই হবে। হাজার হোক ভাড়াটেরা লক্ষ্মী নারায়ণ বলে কথা। অজয়ও একসময় ভাড়াবাড়িতে থাকতো। বাসার মালিকগুলো খুব ভাল ছিল। তবে দু'একজন এক্কেবারে পিশাচ।যাচ্ছেতাই আচরণ। একজনের একটা গুন ছিলো অনুসরণ যোগ্য। বৃষ্টি এলে প্রচুর জল সংরক্ষণ করে রাখতো। তার পরিচিত সেই ব্রহ্মচারীর কথা মনে পড়ে যায় । যিনি কোনদিনই টিউবওয়েলের জল খেতেন না। বর্ষার সময় বড় বড় চাড়ি পেতে জল সংরক্ষণ করে রাখতেন সারা বছরের জন্য। মাটির নীচে গর্ত করে ইয়া বড় বড় কুঁজো ভরে রেখে দিতেন। প্রতিদিন খাওয়ার পর একগ্লাস জল পান করতেন। অনেক জায়গা ঘোরাঘুরি করে একজন মিস্ত্রি পাওয়া গেলো। ততক্ষণে কেউ কেউ বেসামাল পরিস্থিতি পাড়ি দিয়েছে। অসহায়ত্বের শিকার সেই ফ্ল্যাটগুলোর ভিতরের অক্সিজেন ভাগারের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আরশোলা টিকটিকির মতো ফ্ল্যাটের জীবনগুলোও কৌটো বন্দি। অজয় মাঝে মাঝেই গ্রামের সবুজ অরণ্যে নিজেকে, বউ বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়ে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন